বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এদিকে আন্দোলনকে দমন করতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের আওয়ামী পুর্নবাসনের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করে। মশাল মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রশাসন থেকে দ্রুত ফ্যাসিস্টমুক্তকরণ এবং ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করা থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোর হুশিয়ারি দেন।
এদিকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসন বাদি হয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়ায় শিক্ষার্থীরা আরও বেশি ফুঁসে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি জুলাই বিল্পবে হামলাকারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত বিচার করতে পারেনি। এদিকে আওয়ামী পুর্নবাসনের বিরুদ্ধে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে দমাতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ১৭ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে সন্ত্রাসী হিসবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোবৃত্তি পরিত্যাগ করতে এবং প্রশাসন কর্তৃক সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন বিভাগের ৫০জন শিক্ষক। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য সমীপে এ প্রতিবাদলিপি দেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে পাঁচটি বার্তা দেন,
যৌক্তিক চলমান আন্দোলনকে দমন করতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানি মামলা অবিলম্বে ৬ ঘন্টার ভিতর প্রত্যাহার করতে হবে।
অবিলম্বে সিন্ডিকেট মেম্বারদের নাম প্রকাশ ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা।
আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর ও নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত রেজিস্ট্রার এর মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে অতিদ্রুত অপসারণ ঘোষণা করতে হবে। এবং ভিসি দফতরে যে সকল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আছে তাদেরও অপসারণ করতে হবে।
ছাত্র সংসদের জন্য শিক্ষকদের দ্বারা কমিটি করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে হবে (বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী যে আইনটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে না সেটার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কে অনুসরণ করবে।
২৯ শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারী এবং ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাঙচুরে জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সকল কর্মীদের অবিলম্বে একাডেমিক এবং আইনি শাস্তির আওতায় আনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন সহ গত ৩রা ডিসেম্বরের দাবিগুলোর অগ্রগতি কতদূর তা শিক্ষার্থীদের কাছে ১২ ঘন্টার মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে উপাচার্য কিভাবে আওয়ামী দোসরদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্বাসন করা যায় তার পায়তারা করেছেন৷ এছাড়াও জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি রুমের দরজা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের ক্ষতি সাধন করে ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাড়িয়ে নিয়ে বিজয় উদযাপন করলেও প্রশাসনের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখা যায়নি। এবিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি প্রশাসন। উলটো ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন গতকাল থানায় অভিযোগ দায়ের করতে থানায় গিয়েছে। যা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে এর সাথে আমার কেন সম্পর্ক থাকবে? কিন্তু উপাচার্য আমাকেসহ ট্রেজারার ও একজন সিনিয়র শিক্ষককে জড়ানোর চেষ্টা করছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদ আন্দোলনের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে বলেন তিনি এবিষয়কে উপাচার্যের কাছে জানতে চাইবেন কেন তার বিরুদ্ধে এমন কথা বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সুযোগসন্ধানী লোকদের উস্কানিতে গুটিকয়েক শিক্ষার্থীরা এমন করছে। শিক্ষার্থীরা আমার বাসভবনের গেট ভেঙ্গে বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক স্লোগান দেন। কে বা কারা এর পিছনে আছে জানতে চাইলে বলেন, যে তিনজন সিন্ডিকেট সভা বর্জন করে চিঠি দিয়েছেন তারা এর পিছনে আছে বলে জানান তিনি। উপাচার্য বলেন, আর কারা এটা করছে সে বিষয়ে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে পুলিশ তাদেরকে খুঁজে বের করবে।